সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

রাজধানীতে প্রতিদিন ১৮২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছেন যাত্রীরা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৭২ সময় দর্শন

রাজধানীর গণপরিবহনে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। প্রতিবাদ করলে হেনস্তা, অপমান ও হত্যার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা।  যাত্রী অধিকার দিবসের সভায় এ অভিযোগ করেছেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ৪র্থ যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত “অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ চাই” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিযোগ তোলেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এসব ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।

সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত ১ বছরে দুইবার জ্বালানীর তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে উঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোন পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে ২৫টি যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০ জন যাত্রী। এতে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রী সাধারণের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়। ধরণের ঘটনা বাড়তে থাকায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাইকার সমীক্ষানুযায়ী রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। গত এক বছরে দুই দফা জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরে গণপরিবহনে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য থামাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। কোন কোন পরিবহনে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের দৈনিক জমা,  জ্বালানি উচ্চ মূল্য, সড়কের চাঁদাবাজি, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এই ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, রাজধানীতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনগুলো।

রাজধানীর ৫০০০ বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসের শতভাগ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রী প্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়।

এছাড়াও রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় নিবন্ধিত অটোরিকশা অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিকশায় প্রতিট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকা।

হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণের আইন থাকলেও সরকার ভাড়া নির্ধারণ না করায় এখানে বরাবরই দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে নিম্নআয়ের যাত্রী সাধারণকে। ১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ, লক্কড়-ঝক্কড়, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি আরও প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতিট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।

৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে। এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। এসব ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে এবারের যাত্রী অধিকার দিবসের অন্যতম দাবি :

১. পরিবহন খাত আমূল সংস্কার করতে হবে। পরিবহনে চাঁদাবাজি ও অনৈতিক লেনদেন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে। নগদ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।

২. ভাড়া নির্ধারণে মালিক সমিতি একচ্ছত্র আধিপত্য বন্ধে অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ লোকজন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।

৩. ব্যয় বিশ্লেষণের নামে মালিক সমিতির প্রেসক্রিপশনকে সঠিক ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। ভাড়া নির্ধারণে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির তালিকা মাঠ পর্যায়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও ক্যাবের প্রতিনিধি নিয়ে যাচাই বাচাই করে চূড়ান্ত করে ভাড়া নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৪. বাস ভাড়ার তালিকা সংস্কার করতে হবে। যাত্রীসাধারণ শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলে বুঝে, এমন ভাড়ার তালিকা বড় হরফে ডিজিটাল ব্যানারে বাসের ভিতর সাঁটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. পজ মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকিট প্রদান করে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে।

৬. ওয়েবিলের নামে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিস, গেইটলক সার্ভিস বন্ধ করতে হবে।

৭. গণপরিবহনের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, আসন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে বসার উপযোগী রাখতে হবে।

৮. গণপরিবহনের বাহ্যিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সার্বক্ষণিক পাখা চালু রাখতে হবে।

৯. গণপরিবহনে যাত্রী সেবা প্রদান, যাত্রী সেবার মানোন্নয়নসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যাত্রী প্রতিনিধির মতামত নিতে হবে।

১০. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে জরিমানার ক্ষেত্রে একক মালিকানার বাসে ২০,০০০ টাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানি’স এর সভাপতি রফিকুল হোসেন কাজল, এসএমই ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী প্র. মোজাহেরুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক কেফায়েত শাকিল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মনজুর হোসেন ঈসা, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম. মনিরুল হক প্রমুখ।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71